Table of Contents
করোনা ভাইরাস বা Covid-19 নামক মহামারি থেকে বাঁচার উপায়ঃ
১৪৪০ বছর আগে যে মানুষ টি আমাদের ভবিষ্যতবাণী করে গিয়েছিলেন এই মহামারী শাস্তির ব্যাপারে, আজ তাঁর প্রতিটি কথাই যেন বাস্তব রুপ নিচ্ছে। আর মনে তখন একটি প্রশান্তি আসে আমরা সেই নবীর সেই মানুষটির উম্মত। যার নাম নেয়া মাত্রই হযরত আদম (আঃ) এর শাস্তি মাফ হয়ে গিয়েছিল। তিনি হলেন আমাদের প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ (সঃ)। যার আগে পরে কোন গুনাহ না থাকার পরেও তিনি শত শত বার তাওবা করতেন। এবং আমাদের না দেখেও আমাদের জন্য অঝরে কেঁদে আল্লাহ্ তায়ালার কাছে দোয়া করতেন।
আল্লাহ্ সুবহানা তাআলা আমাদের আশরাফুল মাকলুকাত হিসাবে সৃষ্টি করেছে তাঁর ইবাদতের জন্য।
আল্লাহ্ তায়ালা পৃথিবীর মাঝে তখনি যে কোন মহামারী দ্বারা শাস্তি দান করেন, যখন দুনিয়াতে পাপ এবং গুনাহের সংখ্যা বেড়ে যায়। এই পৃথিবীর সবকিছু আল্লাহর ইচ্চায় ঘটে থাকে কোন মানুষ, জীব-জুন্তু, প্রাণী কোন কিছুই তাঁর উর্ধে নয় ।
এভাবে আল্লাহতালা কাউকে বা কোন জাতী কে পরীক্ষা করেন, আবার কাউকে বা কোন জাতী কে আজাব এর মাধ্যমে ধ্বংস করে দেন।
ঠিক মহামারী তেমনই একটি বিষয় । রাসুল (সাঃ) বলেন, “কোন জাতির মধ্যে যখন অশ্লীলতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে তখন প্লেগ রোগ সেখানে মহামারী আকারে আবির্ভাব ঘটে এছাড়া এমন সব রোগের উদ্ভব হয় যা মানুষের আগে মধ্যে কখনও দেখা যায়নি” [ইবনে মাজাহঃ ৪০১৯]
সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসটি ও একটি মহামারী আকারে আবির্ভাব হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহ সুবহানা তাআলা মানুষকে কেন মহামারী দ্বারা শাস্তি দেন?
# শাস্তি দানের কারন হলোঃ
১। দায়িত্ব পালনে অবহেলা
কোন জাতির উপর যখন আযাব আসে তখন শুধুমাত্র পাপীরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। বরং মহামারী শুরু হলে আল্লাহ্র নেকবান্দাগুলো এতে আক্রান্ত হয়।
এই আযাব আসার অন্যতম কারন হলো ভালো কাজের আদেশ, মন্দ কাজে নিষেদ না করা ও দ্বীনি দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা।
আল্লাহ সুবহানা তাআলা বলেনঃ “তোমাদের পূর্বের প্রজন্ম সমূহের মধ্যে এমন প্রজ্ঞাবান কেন হয়নি যারা জমিনে ফাসাদ করা নিষেধ করত? এমন লোক কমই ছিল তাদের আমি বাঁচিয়ে নিয়েছিলাম জানিনা বিলাসিতার পেছনে পড়ে ছিল এবং তারা ছিল অপরাধী” [সূরা হুদঃ ১১৬]
২। ঈমান ও আমলের ব্যাপারে মানুষের উদাসীনতা
মানব জাতির মধ্যে যখন আল্লাহ তায়ালার প্রতি অবাধ্যতা বেড়ে যায় এবং সবাই যখন অবাধে পাপাচারে লিপ্ত হয় তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বিভিন্ন ভাবে তাদের শাস্তি দিয়ে থাকেন। যেমন ভূমিকম্প, ঝড়-তুফান, জলোচ্ছ্বাস ও মহামারীসহ নানান ধরনের আজব দেখা দিতে পারে।
এই আজাবগুলো আসে অশ্লীলতা ও জঘন্য পাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে।
এমন কি দাউদ (আঃ)এর সময়ে পাপাচারের জন্য শাস্তি হিসেবে মহামারীর আবির্ভাব ঘটেছিল।
আল্লাহ বলেন, ”তুমি কি তাদের দেখনি যারা মৃত্যুভয় হাজারে-হাজারে স্বীয় আবাসভূমি ত্যাগ করেছিল অতঃপর আল্লাহ তাদের বলেছিলেন তোমাদের মৃত্যু হোক তারপর আল্লাহ তাদের জীবিত করেন” [ সূরা বাকারাঃ ২৪৩]
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, “তারা সংখ্যায় ছিল চার হাজার। তারা পালিয়ে ছিল মহামারীর ভয়ে ।তারা বলেছিল আমরা এমন ভূমিতে যাব যেখানে মৃত্যু নেই। অতঃপর তারা এক স্থানে একত্র হলো। তখন আল্লাহ তাআলা তাদের উপর মৃত্যুর আদেশ জারী করলেন।” [তাফসির ইবনে কাসির]
মহামারী দেখা দিলে আমাদের প্রধান করণীয় কাজ কি?
১। আমাদের প্রথম কাজ হলো আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তাওবা ইস্তেগফার পাঠ করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর আমি তোমাদের পূর্বেকার জাতিসমূহের কাছে বহু রসূল পাঠিয়েছি অতঃপর রাসুল গন কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে তাদেরকে অভাব-অনটন ও রোগ-শোক দ্বারা পাকড়াও করেছি যাতে তারা বিনীত হয়” [ সূরা আনআমঃ ৪২]
বান্দা যখন কোন বিপদে পড়বে সে আল্লাহর কাছে আশ্রয় ও ক্ষমা চাইবে । আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতা আলা চায় যেন বিপদে তাকে বেশি বেশি স্মরণ করি। সুতরাং মুমিনের অন্যতম প্রধান করণীয় হল মহামারী দেখা দিলে আল্লাহর কাছে নিজের ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা।
২। নিজ এলাকায় অবস্থান করা।
অধিকাংশ মহামারী সংক্রামক হয়ে থাকে তাই
রাসুল (সাঃ) বলেন, “কোথাও মহামারী দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান করলে সেই জায়গা থেকে বের হয়ে যেও না তদ্রূপ কোনো কোনো এলাকায় মহামারী দেখা দিলে আর সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সেখানে যেওনা” [ তিরমিজীঃ ১০৬৫]
অতএব মহামারীতে আক্রান্ত এলাকায় মানুষ সেখানে অবস্থান করবে বাইরে বের হবে না আর বাইরের মানুষ সেখানে প্রবেশ করবে না প্রত্যেকেই নিজ-নিজ ভূমিতে থাকবে।
কেউ যদি এই মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তাহলে এর প্রতিদান কি হবে?
রাসুল (সাঃ) বলেন, “অতএব প্লেগ রোগে কোন বান্দা যদি ধৈর্য ধরে এবং এই বিশ্বাস নিয়ে আপন শহরে অবস্থান করতে থাকে যে আল্লাহ তার জন্য যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তা ছাড়া আর কোনো বিপদ তার ওপর আসবেনা তাহলে সেই বান্দার জন্য থাকবে শহীদের সাওয়াবের পরিমাণ সাওয়াব” [সহীহ বুখারীঃ ৫৭৩৪]
৩। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন, “আত্তাহুরু সাতরুল ঈমান”
অর্থাৎপবিত্রতা ঈমানের অংশ
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ঈমানের অঙ্গ।হাত সবসময় পরিষ্কার রাখুন। বাইরে বের হলে মুখে বা নাকে হাত দেবেন না।রাস্তার পশু পাখি ধরা থেকে বিরত থাকুন।বাসায় ফিরে হাত ধৌত করে খাবার স্পর্শ করবেন ।
৪। মুখ ঢেকে হাঁচি দিন
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হাঁচি দিতেন হাত দিয়ে অথবা এক টুকরো কাপড় দিয়ে মুখ চেপে ধরতেন । এই ছোট্ট যদি আমরা সঠিক ভাবে পালন করি তাহলে ধ্বংসাত্মক সংক্রামক ভাইরাস প্রতিহত করা সম্ভব।
৫। বেশী বেশী দোয়া পাঠ করা
হাদীসে হতে বর্ণিত, “যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় ও সন্ধ্যায় দোয়াটি তিনবার পাঠ করবে হঠাৎ তাঁর কোনো বিপদ আসবে না দোয়াটি হলোঃ বিসমিল্লাহিল্লাযি লা ইয়া দুররু মা’আস মিহি শাই উন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামা ঈ ওয়াহুয়াস সামিয়ুল আলিম।”
অর্থাৎ আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।[আবু দাউদঃ ৫০৮৮]
এছাড়া রাসুল (সাঃ) পরতেন, “আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’য়ুজুবিকা মিনাল বারাছ, ওয়াল জুনুন, ওয়াল জুযাম, ওয়া সায়্যিইল আসক্বাম।”
অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট ধবল, কুষ্ঠ এবং উন্মাদনা সহ সব ধরনের কঠিন দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে পানাহ চাই। [আবু দাউদঃ ১৫৫৪]
সুতরাং মহামারী করোনাভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে, প্রয়োজনীয় সতর্কতার পাশাপাশি দোয়াটি বেশি বেশি দোয়া পাঠ করুন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে এই মহামারী ভাইরাস থেকে হেফাজত করুক। আমিন।